কম্পিউটার সংগঠন – NTRCA ICT স্কুল পর্যায় লিখিত

By | May 10, 2024

কম্পিউটার সংগঠন বা কম্পিউটার পদ্ধতির সংগঠন (Computer System Organization)

NTRCA বা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন এর স্কুল পর্যায়ে ICT বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার সিরিজে আপনাদের সকলকে স্বাগতম। এই সিরিজে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার সকল কনটেন্ট আপলোড করা হবে। প্রতিটি পর্বের জন্য থাকছে ইউটিউব ভিডিও।

আজকের বিষয় হলো কম্পিউটার সংগঠন। অর্থাৎ কম্পিউটারের যন্ত্রাংশসমূহ কিভাবে সমন্বয় সাধন করে একটি একক ইউনিট হিসাবে কাজ করে সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো। সাথে থাকবে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সংক্রান্ত আলোচনা।

স্কুল পর্যায়ে ICT লিখিত পরীক্ষার সকল পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।

কম্পিউটার সংগঠন (Computer Organization)

একটি কম্পিউটার সিস্টেম দুটি অংশ নিয়ে গঠিত।  প্রথম অংশটি হলো কম্পিউটারের দৃশ্যমান অংশ যা হার্ডওয়্যার নামে পরিচিত।  কম্পিউটার আরেকটি অপরিহার্য অংশ যা দৃশ্যমান নয় সেটি হল সফটওয়্যার।  কম্পিউটার সংগঠন বলতে কেবলমাত্র হার্ডওয়ারের সংগঠনকেই বুঝানো হয়ে থাকে। 

কম্পিউটারে এমন একটি যন্ত্র যা অনেকগুলো যন্ত্রাংশের সমন্বয়ে  গঠিত। এটির কোন যন্ত্রাংশ একক ভাবে কোন কাজ সম্পাদন করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন কম্পিউটারের যন্ত্রাংশের মধ্যে সমন্বয় সাধন বা সংযোগ  স্থাপন।  কম্পিউটারের বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের মধ্যে সম্পর্ক বা সংযোগ স্থাপনের বিন্যাসই হচ্ছে কম্পিউটারের সংগঠন। 

আধুনিক কম্পিউটার সংগঠন এর মূল অংশ তিনটি

  • ইনপুট ইউনিট
  • সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট
  • আউটপুট ইউনিট

এর মধ্যে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়

  • এরিথমেটিক লজিক ইউনিট বা গাণিতিক যুক্তি অংশ
  • কন্ট্রোল ইউনিট বা নিয়ন্ত্রণ অংশ
  • মেমরি ইউনিট বা  স্মৃতি অংশ

নিম্নে কম্পিউটার সংগঠন ব্লক দেয়া হলো:

কম্পিউটার সংগঠন
কম্পিউটার সংগঠন

নিম্নে একটি কম্পিউটার সংগঠন এর প্রত্যেকটি ইউনিট সম্পর্কে জানব। 

ইনপুট ইউনিট

যে ডিভাইসের মাধ্যমে ডাটা ও নির্দেশ কম্পিউটারে প্রবেশ করানো হয় তাকে ইনপুট ইউনিট বলে।  এই ইউনিটে বিশেষ মাধ্যম হতে ডেটা ও প্রোগ্রাম গ্রহণ করে বৈদ্যুতিক তরঙ্গে রূপান্তরের পর কম্পিউটারের মেমোরিতে সংরক্ষণ করে।  কয়েকটি ইনপুট ইউনিটের নাম মাউস, কিবোর্ড, কার্ড রিডার, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, মাইক্রোফোন ইত্যাদি।

কম্পিউটার সংগঠন - ইনপুট ডিভাইস
কম্পিউটার সংগঠন – ইনপুট ডিভাইস

সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ

কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কম্পিউটারের মস্তিষ্ক স্বরূপ। এরিথমেটিক লজিক ইউনিট, কন্ট্রোল ইউনিট ও মেমোরি ইউনিটকে একত্রে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিইউ CPU বলে।  সিপিইউ হচ্ছে কম্পিউটারের প্রধান চালিকাশক্তি।  মাইক্রো কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট হিসাবে মাইক্রোপ্রসেসর ব্যবহার করা।

সিপিইউ বা মাইক্রোপ্রসেসর যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ, হিসাব নিকাশ ও নিয়ন্ত্রণের কাজ করে।  কম্পিউটারের ইনপুট ডিভাইস সমূহ নির্দেশ ও ডাটা গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশে প্রেরণ করে।  কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশ প্রাপ্ত ডাটার নির্দেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফলাফল প্রস্তুত করে আউটপুট ডিভাইস সমূহ প্রেরণ করে। এই সিপিইউ এর মধ্যে তিনটি প্রধান ইউনিট থাকে যেমন

  • এরিথমেটিক লজিক ইউনিট বা গাণিতিক যুক্তি অংশ
  • কন্ট্রোল ইউনিট বা নিয়ন্ত্রণ অংশ
  • মেমরি ইউনিট বা  স্মৃতি অংশ

এরিথমেটিক লজিক ইউনিট

এই অংশে গাণিতিক যুক্তি ও সিদ্ধান্ত মূলক সকল সমস্যার সমাধান করা হয়। এরিথমেটিক লজিক ইউনিট সংক্ষেপে এএলইউ ALU নামে পরিচিত।  প্রতিটি যোগ, বিয়োগ, গুন ও ভাগের ফলাফল কে কন্ট্রোল ইউনিট প্রধান মেমোরিতে প্রেরণ করে এবং আউটপুট এর মাধ্যমে প্রদর্শন করে। AND, OR, NOT, NOR, NAND ইত্যাদি যুক্ত বর্তনীর মাধ্যমে গাণিতিক ও যৌক্তিকতা সমস্যা সমাধান করে। 

কন্ট্রোল ইউনিট

ইনপুট ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে কোন নির্দেশ বা কমেন্ট দিলে সেই নির্দেশ ও কমেন্ট কোথায় যাবে, কিভাবে কাজ করবে এবং কি ধরনের কাজ করবে সেটি কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।  প্রথমে কন্ট্রোল ইউনিট মেমোরি থেকে নির্দেশ গ্রহণ করে রেজিস্টারে জমা রাখে।  পরে নির্দেশটি কি ধরনের তা বিশ্লেষণ করে স্থির করে। 

কন্ট্রোল ইউনিটের কাজ হচ্ছে প্রাপ্ত নির্দেশ এর ভিত্তিতে কম্পিউটারের যাবতীয় কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণ  করা।  কম্পিউটারের ডেটা কোথায় যাবে, কখন যাবে, কি কাজ সম্পাদন করবে ইত্যাদির মধ্যে সমন্বয় সাধন এবং নিয়ন্ত্রণ করাই হচ্ছে কন্ট্রোল ইউনিটের কাজ।  কন্ট্রোল ইউনিট কম্পিউটারের যন্ত্রপাতিকেও নিয়ন্ত্রণ করে। 

মেমোরি ইউনিট

মেমোরি কম্পিউটারের একটি অংশ যেখানে তথ্য জমা থাকে।  কম্পিউটার কার্যকালীন সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য মেমোরিতে সংরক্ষণ করে রাখে।  প্রয়োজনের সময়ে মেমোরি থেকে তথ্য নিয়ে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ সহ যাবতীয় কাজ করতে পারে।  মেমোরির সাথে কম্পিউটারের অন্যান্য অংশের সরাসরি সংযোগ থাকে।  যেকোনো তথ্য দিয়ে একটি সংখ্যা অক্ষর বা প্রতীক চিহ্ন প্রকাশ করা হয়ে থাকে।   এই আট বিটের শব্দকে এক বাইট বলে। ১০২৪ বাইটকে বলা হয় ১ কিলোবাইট।  অনেকেই ১০০০ বাইকে এক কিলোবাইট ধরে থাকেন যেটা সঠিক নয়। 

মেমোরিকে সাধারণভাবে দুই ভাগে ভাগ করা যায়

  • প্রাথমিক বা প্রাইমারি মেমরি
  • সহায়ক বা সেকেন্ডারি মেমোরি

প্রাথমিক মেমোরির মধ্যে আছে Ram, রম, ক্যাশ (Cache) মেমারি আর স্টোরেজ ডিভাইস গুলো যেমন হার্ডডিস্ক, ফ্লপিডিস্ক হচ্ছে সহায়ক মেমোরি।  বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে প্রধান মেমোরি কে আরো দুইটি ভাগে ভাগ করা যায়।  স্থায়ী ও অস্থায়ী মেমরি।  স্থায়ী মেমোরিতে তথ্য সংরক্ষিত থাকলেও কম্পিউটার বন্ধ করার সাথে সাথে অস্থায়ী মেমোরিতে সংরক্ষিত তথ্য গুলো মুছে যায়। 

আউটপুট ইউনিট

কম্পিউটারে প্রদত্ত তথ্যাবলী  মাইক্রোপ্রসেসরে প্রক্রিয়াকরণের পরে যে সকল যন্ত্র বা ডিভাইস ফলাফল প্রকাশ করে সেগুলোই হচ্ছে আউটপুট ইউনিট।  নিম্নে কয়েকটি আউটপুট ডিভাইসের নাম উল্লেখ করা হলো।  মনিটর, প্রিন্টার, স্পিকার, প্লটার, মাইক্রোফ্লিম ইত্যাদি।

আউটপুট ডিভাইস
আউটপুট ডিভাইস

সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার

একটি কম্পিউটার সিস্টেমের খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুটি অংশ হলো সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার। সহজ ভাষায় বলতে গেলে কম্পিউটারের যে সমস্ত জিনিসগুলো হাত দিয়ে ধরা যায় বা ছোঁয়া যায় সেগুলো হচ্ছে হার্ডওয়ার এবং যেগুলো হাত দিয়ে ধরা যায় না সেগুলো হচ্ছে সফটওয়্যার।  এ বিষয়ে নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:

সফটওয়্যার

সফটওয়্যার হল একটি প্রোগ্রামের সেট বা নির্দেশাবলী যা একটি কম্পিউটার পরিচালনা করতে এবং নির্দিষ্ট কাজে ব্যবহৃত হয়। সফটওয়্যার হলো কতগুলো প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টি যা হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়ার্কের সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।  সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়ার পরিচালনা করা যায় না। 

হার্ডওয়্যার

হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের বাহ্যিক অংশ।  কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো বা আকৃতি সম্পন্ন সকল যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস কে হার্ডওয়্যার বলে।  হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যার মূল্যহীন। 

নিম্নে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ারের পার্থক্য দেয়া হলো 

সফটওয়্যার হার্ডওয়ারের 
সফটওয়্যার হলো কতগুলো প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রামের সমষ্টি যা হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়ার্কের সচল ও ব্যবহার উপযোগী করে তোলে।হার্ডওয়ার হল কম্পিউটারের বাহ্যিক অংশ।  কম্পিউটারের বাহ্যিক অবকাঠামো বা আকৃতি সম্পন্ন সকল যন্ত্রাংশ বা ডিভাইস কে হার্ডওয়্যার বলে।
প্রোগ্রাম বা  একাধিক প্রোগ্রামের সমষ্টিকে বোঝায়কম্পিউটারের যন্ত্র সামগ্রীকে বোঝায়
সফটওয়্যার ছাড়া হার্ডওয়ার পরিচালনা করা যায় না। হার্ডওয়্যার ছাড়া সফটওয়্যার মূল্যহীন। 
সফটওয়্যার তৈরীর সময় হার্ডার সম্বন্ধে ভালো ধারণা না থাকলেও চলেহার্ডওয়্যার তৈরীর সময় অবশ্যই সফটওয়্যার সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকতে হয়
উদাহরণ: উইন্ডোজ, Microsoft word, Excel ইত্যাদিউদাহরণ: কিবোর্ড, মাউস, মনিটর, সিপিইউ ইত্যাদি 

তো এরই সাথে শেষ হলো আজকের কম্পিউটার সংগঠন সংক্রান্ত আলোচনা. পরবর্তী পোস্ট শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে. আপডেট পেতে iSudip YouTube Channel ইউটিউব চ্যানেল এবং iSudip Facebook Page এর সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।

Facebook Comments