কম্পিউটারের প্রজন্ম NTRCA ICT স্কুল পর্যায় লিখিত পর্ব ০২

By | May 2, 2024

কম্পিউটারের প্রজন্ম বা কম্পিউটার জেনারেশন (Computer Generation)

NTRCA বা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন এর স্কুল পর্যায়ে ICT বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার সিরিজে আপনাদের সকলকে স্বাগতম। এই সিরিজে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার সকল কনটেন্ট আপলোড করা হবে। প্রতিটি পর্বের জন্য থাকছে ইউটিউব ভিডিও।

আজকের বিষয় হলো কম্পিউটারের প্রজন্ম। অর্থাৎ ১ম বাণিজ্যিক কম্পিউটার থেকে শুরু করে ভবিষ্যত কম্পিউটারের প্রজন্ম সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করবো।

স্কুল পর্যায়ে ICT লিখিত পরীক্ষার সকল পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।

কম্পিউটারের প্রজন্ম

সর্বপ্রথম IBM কম্পিউটারের একটি বিজ্ঞাপন থেকে কম্পিউটারের প্রজন্ম হিসাব করার প্রথা চালু হয়। কম্পিউটার পরিবর্তন, উন্নয়ন ও বিকাশের একেকটি ধাপ বা পর্যায়কে কম্পিউটারের প্রজন্ম বা কম্পিউটার জেনারেশন বলা হয়। কম্পিউটার জেনারেশন মূলত ৫ প্রকার। নিম্নে তা দেয়া হলো:

  • ১ম জেনারেশন (১৯৫১-৫৯)
  • ২য় জেনারেশন (১৯৬০-৬৩)
  • ৩য় জেনারেশন (১৯৬৪-৭০)
  • ৪র্থ জেনারেশন (১৯৭১-বর্তমান)
  • ৫ম জেনারেশন (ভবিষ্যত)

নিম্নে আমরা প্রতিটি কম্পিউটারে প্রজন্ম সম্পর্কে জানবো।

১ম প্রজন্ম/জেনারেশন (১৯৫১-৫৯)

১ম প্রজন্মের কম্পিউটারগুলোর মূল প্রযুক্তি ছিল ভ্যাকুয়াম টিউব। এই কম্পিউটাগুলো আকৃতি ছিল অনেক বড় কারণ এতে অসংখ্য ডায়োড, ট্রায়োড, ভালভ, রেজিস্টার ও ক্যাপাসিটার ব্যবহার করা হতো। এর কাজের গতি ছিল অনেক কম অপরদিকে বিদ্যুত খরচ হতো বেশি যার ফলে তাপ উৎপাদনও বেশি। এই কম্পিউটার ঠান্ডা রাখতে মাঝে মধ্যে ঠান্ডা পানি ব্যবহার করার প্রয়োজন হতো। বাংলাদেশে বর্তমানে বুয়েটে একটি ১ম প্রজন্মের কম্পিউটার সংরক্ষণ করা আছে।

এর আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • ধীর গতিসম্পন্ন
  • আকারে বড় এবং অনেক বেশি ওজন
  • ভ্যাকুয়াম টিউব ও বৈদ্যুতিক বর্তনীর ব্যবহার
  • দাম অনেক বেশি
  • শুধুমাত্র মেশিন কোড ইনপুট হিসাবে দেয়া যেত
  • আইও (i/o) অপারেশনের জন্য পাঞ্চকার্ডের ব্যবহার করা হতো
  • রক্ষণাবেক্ষন সমস্যা
  • তথ্য ধারণের জন্য ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক টিউবের ব্যবহার
  • তথ্য ধারণ ক্ষমতা কম
  • উদাহরণ Univac 1 IBM 650 IBM 704 IBM 7 09 mark 2
কম্পিউটারের প্রজন্ম - ১ম প্রজন্ম
কম্পিউটারের প্রজন্ম – ১ম প্রজন্ম

২য় প্রজন্ম / জেনারেশন (১৯৬০-৬৩)

দ্বিতীয় জেনারেশনের কম্পিউটারের মূল পরিবর্তন ছিল ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টরের ব্যবহার। এর ফলে কম্পিউটারের আকৃতি হয়ে যায় ছোট এবং কম্পিউটার হয়ে যায় দ্রুত গতিসম্পন্ন। এই প্রজন্মের কম্পিউটারের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • ১ম জেনারেশনের তুলনায় অধিক গ্রহণযোগ্য
  • ভ্যাকুয়াম টিউবের পরিবর্তে ট্রানজিস্টরের প্রচলন
  • ম্যাগনেটিক কোর মেমোরি ব্যবহার 
  • আকৃতি সংকোচন 
  • মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ এর পরিবর্তে উচ্চ স্তরের ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার 
  • টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ডাটা প্রেরণের ব্যবস্থা
  •  উচ্চগতি সম্পন্ন ও উচ্চ মানের আই ও অপারেশন ব্যবস্থার প্রচলন
  •   অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া/তাপ সমস্যার সমাধান
  • উদাহরণ IBM 1401 CDC 1604 RCA 301 RCA 501
কম্পিউটারের প্রজন্ম - ২য় প্রজন্ম
কম্পিউটারের প্রজন্ম – ২য় প্রজন্ম

৩য় প্রজন্ম / জেনারেশন (১৯৬৪-৭০)

তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারের মূল পরিবর্তন আসে আইসি অথবা ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট ব্যবহারের মাধ্যমে। ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্ধপরিবাহী ডায়ড ট্রানজিস্টর এবং অন্যান্য ইলেকট্রনিক যন্ত্র সমন্বয় গঠিত। যার ফলে তৃতীয় প্রজন্মের কম্পিউটারে আইসি ব্যবহার শুরু হয়। এতে করে কম্পিউটারের আকার ও দাম কমে গেলেও গতি বেড়ে যায়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • কম্পিউটারে ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এর ব্যবহার
  • আকৃতি সংকোচন ও অধিক নির্ভরযোগ্যতা
  • কম্পিউটারের কাজের ক্ষমতা ও গতি বৃদ্ধি
  • সহজে বহনযোগ্য ও বিদ্যুৎ শক্তি কম খরচ
  • মুদ্রিত আকারে লাইন প্রিন্টারের ব্যবহার
  • আউটপুট হিসাবে ভিডিও ডিসপ্লে ইউনিটের প্রচলন
  • উচ্চতর ভাষার উন্নয়ন ও ব্যবহার
  • মিনি কম্পিউটারের উদ্ভাবন শুরু
  • অর্ধপরিবাহী স্মৃতির ব্যবহার
  • কম্পিউটারের দাম অনেক কমে যায়
  • উদাহরণ IBM 360 IBM 370 PDP 8 PDP 2
৩য় প্রজন্মের কম্পিউটার
৩য় প্রজন্মের কম্পিউটার

৪র্থ প্রজন্ম / জেনারেশন (১৯৭১-বর্তমান)

চতুর্থ প্রজন্মের কম্পিউটার বলতে মূলত পার্সোনাল কম্পিউটার কেই বোঝানো হয় নতুন দুইটি প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয় একটি হচ্ছে এলএসআই এবং আরেকটি হচ্ছে মাইক্রোপ্রসেসর এবং সেমিকন্ডাক্টর মেমোরি দিয়ে এই প্রজন্মের কম্পিউটার গুলো তৈরি হয় এই প্রজন্মেই কম্পিউটারের স্মৃতি উদ্ভাবিত হতে থাকে ফলে কম্পিউটারের আকার আয়তন ও দাম কমে যায় এবং কাজ করার ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এই প্রজন্মের কম্পিউটারের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার বা মাইক্রো কম্পিউটারের প্রচলন
  • বৃহদাকার একীভূত বর্তনী বা ভিএলএসআই এর ব্যবহার
  • বটতলী গুলোতে অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার
  • উন্নত মেমোরি তথা ম্যাগনেটিক ডাবল মেমোরির ব্যবহার
  • অত্যন্ত শক্তিশালী ও উচ্চগতি সম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর
  • সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন
  • উদাহরণ IBM 3033 IBM 4341 TRS 40 IBM PC
৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার
৪র্থ প্রজন্মের কম্পিউটার

৫ম প্রজন্ম / জেনারেশন (ভবিষ্যত)

ভবিষ্যতের কম্পিউটারগুলোতে যেই প্রযুক্তি সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হবে সেটি হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স।  সুপারভিএলএসআই চিপ ও অপটিক্যাল ফাইবারের সমন্বয়ে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার তৈরি হবে।  শক্তিশালী মাইক্রোপ্রসেসর ও অনেক বেশি তথ্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মেমোরি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা চলছে।  মানুষের কণ্ঠস্বর সনাক্ত করার ক্ষমতা ও কন্ঠে দেয়া নির্দেশ বুঝতে পারে এমন ক্ষমতা সম্পন্ন বৈশিষ্ট্য থাকবে এই প্রজন্মের কম্পিউটারে।  প্রতি সেকেন্ডে ১০ থেকে ১৫০ কোটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবে পঞ্চম প্রজন্মের কম্পিউটার। এই প্রজন্মের কম্পিউটারের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য:

  • কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এবং যোগাযোগ করার জন্য অপটিক্যাল ফাইবারের ব্যবহার
  •  তথ্য ধারণ ক্ষমতা ব্যাপক উন্নতি
  •  অনেকগুলো মাইক্রোপ্রসেসর বিশিষ্ট ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এর ব্যবহার
  •  মানুষের কণ্ঠস্বর সনাক্ত করার ক্ষমতা
  •  অধিক হওয়া শক্তি সম্পন্ন সুপার কম্পিউটারের উন্নয়ন
  •  চৌম্বকোর স্মৃতি বা ম্যাগনেটিকোর মেমোরি ব্যবহার
  •  উচ্চতর ভাষায় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ এর উন্নতি 
কম্পিউটারের ৫ম প্রজন্ম
কম্পিউটারের ৫ম প্রজন্ম

একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কম্পিউটারের প্রজন্ম এবং প্রোসেসরের প্রজন্ম কিন্তু এক বিষয় না। আমরা অনেকেই হয়তো ইন্টেল বা এএমডি প্রোসেসরের জেনারেশন বা প্রজন্ম সম্পর্কে জানি। সেই প্রজন্ম এবং কম্পিউটারের প্রজন্ম আলাদা।

কম্পিউটারের প্রজন্ম বনাম প্রোসেসরের প্রজন্ম

  • প্রোসেসরের বিভিন্ন রকম জেনারেশন হয়ে থাকে। যেমন: ইন্টেল, এমডি
  • প্রোসেসরের জেনারেশন মূলত একটি টেক বেজড বিজনেস আইডিয়া
  • নতুন জেনারেশনসমূহে র‌্যাম, ক্যাশ (Cache) সাপোর্ট, ওভারক্লক (Overclock OC) বেশি হয়ে থাকে।
  • প্রোসেসরের জেনারেশনের সাথে কম্পিউটারের জেনারেশনের কোন সম্পর্ক নেই

এটি ছিল কম্পিউটারের প্রজন্ম বিষয়ক বিস্তারিত আলোচনা। পরবর্তী পোস্ট শীঘ্রই প্রকাশ করা হবে। আপডেট পেতে iSudip YouTube Channel ইউটিউব চ্যানেল এবং iSudip Facebook Page এর সাথে কানেক্ট থাকতে পারেন।

Facebook Comments