কম্পিউটারের ইতিহাস | NTRCA ICT স্কুল পর্যায় লিখিত পর্ব ১

By | April 26, 2024

অ্যাবাকাস থেকে শুরু করে প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটারের ইতিহাস

NTRCA বা বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন এর স্কুল পর্যায়ে ICT বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার সিরিজে আপনাদের সকলকে স্বাগতম। এই সিরিজে স্কুল পর্যায়ে শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষার সকল কনটেন্ট আপলোড করা হবে। প্রতিটি পর্বের জন্য থাকছে ইউটিউব ভিডিও।

আজকের বিষয় হলো অ্যাবাকাস থেকে শুরু করে প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটারের ইতিহাস। অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে শুরু করে ১ম প্রজন্মের কম্পিউটার সম্পর্কে আমরা জানার চেষ্টা করবো।

স্কুল পর্যায়ে ICT লিখিত পরীক্ষার সকল পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।

প্রথমেই দেখে নেয়া যাক সিলেবাস। তারপর আমরা সিলেবাস ধরে ধরে আগাবো। আজকের মূল বিষয় হলো কম্পিউটারের ইতিহাস।

NTRCA ICT স্কুল পর্যায়ের সিলেবাস

কম্পিউটার কাকে বলে?

ইংরেজি শব্দ Compute থেকে Computer শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। Compute কথাটির অর্থ গণনা করা। কম্পিউটার কথার অর্থ যে গণনা করে। অক্সফোর্ড ডিকশনারি অনুসারে, কম্পিউটার হল হিসাব-নিকাশ করা অথবা অন্য কোন যন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তথ্য সংরক্ষণ বিশ্লেষণ এবং উৎপাদন করে। কম্পিউটার একটি মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস। বর্তমানে কম্পিউটারের গণনা ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স বিকাশের ফলে আইসিটি মুঠোর মধ্যে এসেছে যার মূল উপাদান হিসেবে রয়েছে কম্পিউটার।

কম্পিউটার একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র যা তার মেমোরিতে সংরক্ষিত থাকা নির্দেশের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়, যা ডেটা গ্রহণ করে তাকে সুনির্দিষ্ট নিয়মে প্রক্রিয়াকরণ করে ফলাফল তৈরি করে ও ভবিষ্যতে এই ফলাফল ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ কপিরাইট আইনে কম্পিউটারের সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে এভাবে, ”কম্পিউটার অর্থে মেকানিক্যাল ইলেকট্রন মেকানিক্যাল ইলেকট্রনিক ম্যাগনেটিক ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ডিজিটাল বা অপটিক্যাল বা অন্য কোন পদ্ধতির ইম্পালস ব্যবহার করিয়া লজিক্যাল বা গাণিতিক যে কোন একটি বা সকল কাজকর্ম সম্পাদন করে এমন তথ্য প্রক্রিয়াকরণ যন্ত্র বা সিস্টেম।”

কম্পিউটার কাকে বলে?

কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্যসমূহ

১. নির্ভুলতা:

কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয়েছিল দ্রুত সময়ে নির্ভুল হিসাব করার জন্য। কম্পিউটার ইনপুট-প্রসেস-আউটপুট এই পদ্ধতিতে কাজ করে। অর্থাৎ, আমরা গণকযন্ত্রকে কোনো তথ্য পাঠাই এবং সেই তথ্য এই যন্ত্রটি অসংখ্য সূক্ষ বৈদ্যুতিক বর্তনীর সাহায্যে গণনা করে সঠিক ফলাফল দিয়ে থাকে।তাই, মানুষের করা গণনার থেকে যন্ত্র-নির্ভর গণনা অনেকটাই নির্ভুল ও যুক্তিসঙ্গত। তবে, মানুষ যদি ভুল তথ্য প্রদান করে, তবে কম্পিউটার সেখানে ভুল তথ্যই সরবরাহ করবে, এবং তখন তাকে আমরা গার্বেজ ইনপুট ও গার্বেজ আউটপুট বলে থাকি।

২. উচ্চ গতিসম্পন্নতা:

কম্পিউটার নির্ভুলভাবে গণনার পাশাপাশি দ্রুতগতিতে ফল ঘোষণা করতে সক্ষম।  যেহেতু, এই যন্ত্র বৈদ্যুতিক সংকেতের সাহায্যে কাজ করে, তাই এই যন্ত্র মাইক্রো, মিলি, ন্যানো পিকো সেকেন্ডের মধ্যে ফলাফল বের করে দিতে পারে। একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার গড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ থেকে ৪০ লক্ষেরও বেশি গাণিতিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম।

৩. ত্রুটি সনাক্তকরণ ও সংশোধন:

কম্পিউটারের ভুল নির্ধারণ ও পরবর্তীতে সংশোধন করার ক্ষমতা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি।  এই যন্ত্রগুলো এমনভাবেই প্রোগ্রাম করা হয়, যা অতি দ্রুত ভুল সনাক্ত করতে ও সংশোধন করতে সক্ষম।

৪. মেমরি:

কম্পিউটারের মেমোরি বা স্টোরেজ স্পেস অনেকটাই বেশি থেকে থাকে।  যার ফলে, অসংখ্য কিংবা কোটি কোটি তথ্য কম্পিউটারের মধ্যে জমা রাখা সম্ভব।  মানুষের থেকে ইনপুট পাওয়া মাত্রই এই যন্ত্র চট করে ও নির্ভুলভাবে সেইসব তথ্য দেখতে বা ব্যবহার করতে পারে।  একটি কম্পিউটার বছরের পর বছর কোটি কোটি তথ্য কোনোরকম অসঙ্গতি ছাড়াই সেভ বা জমা রাখতে পারে।

৫. বিশাল তথ্য প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা:

এই যন্ত্র মানুষের দেওয়া তথ্য ইনপুট আকারে গ্রহণ করে, সেই তথ্যকে বিশ্লেষণ করে আউটপুটের আকারে তা প্রদর্শন করে।  তাই, জটিল গাণিতিক হিসাব থেকে শুরু করে তথ্য ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ সবকিছুর সঠিক প্রক্রিয়াকরণের জন্যেই মানুষ এই যন্ত্রেই উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।

৬. লজিকাল ডিসিশন মেকিং:

কম্পিউটারের সমস্ত প্রক্রিয়াই নির্ভর করে যুক্তির উপর।  যেহেতু, এই যন্ত্রের নিজস্ব বুদ্ধি বা বিচার করার ক্ষমতা এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়নি।  এই কারণেই, গণকযন্ত্র গুলো প্রোগ্রামে দেওয়া যুক্তির উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত প্রকাশ করে।

৭. অক্লান্ত কর্মক্ষমতা:

মানুষের দিনে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা মতো বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন থাকে।  কিন্তু, কম্পিউটারের মতো যন্ত্র নিরলসভাবে একটানা কাজ করে যেতে সক্ষম।

৮. সূক্ষ প্রক্রিয়াকরণের ক্ষমতা:

মানুষ যতই জটিল গাণিতিক সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হোক না কেন, সূক্ষ গাণিতিক বিশ্লেষণে কম্পিউটারের মতো পাকা হিসেবি ও সঠিক উত্তর প্রদান মানুষের পক্ষে সবসময় দেওয়া অসম্ভব। তাই, কম্পিউটার যেকোনো গাণিতিক সমস্যার ফল যদি দশমিকের ঘর অতিক্রম করে, তবে সেই উত্তরও সে নির্ভুলভাবে প্রকাশ করতে পারে।

৯. বহুমুখতা:

একটি গণকযন্ত্র মাল্টিটাস্কিং বা একসাথে অনেকগুলো কাজ করতে সক্ষম।  গাণিতিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এই যন্ত্র বৈজ্ঞানিক গবেষণা, তথ্য সংরক্ষণ, ব্যবস্থাপনা, এন্টারটেইনমেন্ট, শিক্ষা ও টেলিকমুনিকেশন, ও আরও নানানধরণের কাজ করতে পারে।

১০. স্বয়ংক্রিয়তা:

কম্পিউটারকে তথ্য প্রদান বা ইনপুট দিলে বাকি সমস্ত কাজটা সে একাই করতে পারে।  এই প্রসেসিং করার জন্য একটি গণকযন্ত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করতে পারে।

কম্পিউটারের ইতিহাস: 

ধারণা

কম্পিউটারের ইতিহাস জানতে হলে আমাদের প্রথমে জানতে হবে কম্পিউটারের ধারণা কার মাধ্যমে এলো। কম্পিউটার যন্ত্রের ধারণা যিনি সর্বপ্রথম নিয়ে আসেন তিনি হলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক চার্লস ব্যাবেজ। তিনি বিশ্বের প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য (Programmable) কম্পিউটারের ধারণার সূচনা করেন। ১৮২২ সালে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার তৈরি করা হয়। এর নাম ছিলো ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। পরবর্তীতে ১৮৩৩ সালে তিনি এনালিটিকাল ইঞ্জিন নামে একটি গণনাযন্ত্র তৈরির পরিকল্পনা ও নকশা করেন।

অ্যবাকাস

খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে সর্বপ্রথম গণনাযন্ত্র আবিষ্কার করা হয় যার নাম ছিল অ্যাবাকাস (Abacus)। একটি ফ্রেমে সাজানো গুটি অবস্থান পরিবর্তন করে গণনার কাজ করতো। জানা যায়, রাজস্ব হিসাবের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করা হতো চীনে। পরবর্তীতে অন্যান্য দেশও অ্যবাকাস ব্যবহার করতে শুরু করে।

কম্পিউটারের ইতিহাস অ্যাবাকাস কম্পিউটার

নেপিয়ার্স বোন (Napier’s Bone)

১৬১৪ সালে জন নেপিয়ার (John Napier) নামক একজন স্কটিশ গণিতবিদ গণনা কাজের জন্য হাতির হাড় ও দাঁত ব্যবহার করে একটি যন্ত্র তৈরি করেছিলেন যার নাম ছিল নেপিয়ার্স বোন। এই যন্ত্রের মাধ্যমে গুণ, ভাগ, বর্গ, বর্গমূলসহ অনেক কাজ করা যেত।

কম্পিউটারের ইতিহাস - নেপিয়ার্স বোন

স্লাইডরুল

১৬২২ সালে উইলিয়ার অর্টেড জন নেপিয়ারের তৈরি করা নেপিয়ার্স বোন ব্যবহার করে বৃত্তাকার একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন। এর নাম ছিল স্লাইডরুল। আধুনিক যুগের ক্যালকুলেটর ব্যবহারের পূর্বে এই যন্ত্রের প্রচুর জনপ্রিয়তা ছিল।

কম্পিউটারের ইতিহাস - স্লাইডরুল

প্যাসকেলের চাকা

ফরাসী বিজ্ঞানী প্যাসকেল চাকার সাহায্যে একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেন ১৬৭১ সালে। এই চাকা একদিকে ঘুরিয়ে যোগ এবং অপরদিকে ঘুরিয়ে বিয়োগ করা যেত। পরবর্তীতে এই চাকার সাথে দন্ড ব্যবহার করে গুণ ও ভাগের কাজ করা হতো। বলা হয়ে থাকে যে এই যন্ত্রটিই আধুনিক ক্যালকুলেটরের সাবেক রূপ।

কম্পিউটারের ইতিহাস - প্যাসকাল হুইল

মেকানিকাল ক্যালকুলেটর

কম্পিউটারের ইতিহাস দেখলে দেখা যায় যে প্রচুর পরিমাণ ক্যালকুলেটরের উদ্ভাবন। ১৬৭৪ সালে সিলিন্ডারের আকৃতিবিশিষ্ট প্রথম মেকানিকাল ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করা হয়। এতে গিয়ার ব্যবহার করা হতো। এর সাহায্যে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করা যেতো। এটি ছিল পৃথিবীর প্রথম ডিজিটাল মেকানিকাল ক্যালকুলেটর।

জ্যাকুয়ার্ড পাঞ্চকার্ড

১৮০১ সালে জ্যাকুয়ার্ড পাঞ্চকার্ড আবিষ্কার করা হয়। প্রথম দিকে বস্ত্র শিল্পে এর ব্যবহার ছিল বলে একে জ্যাকুয়ার্ড লুম (Jacquard’s Loom) ও বলা হয়। পরবর্তীতে এর প্যাটার্ন পরিবর্তন করে আধুনিক কম্পিউটারের অনেক স্বয়ংক্রিয় কাজে ব্যবহার করা হয়।

অ্যারিথমিটার ক্যালকুলেটর

টমাস ডি কলমার সর্বপ্রথম ১৮২০ সালে একটি ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। এই যন্ত্রটি প্রদর্শিত হয় ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমীতে। প্রথম প্রচলনের পর প্রায় ১০০ বছর এটি বাজারজাত করা হয়।

প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার:

১৯৫১ সালে প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয়। এর নাম হলো UNIVAC-1. এই কম্পিউটার পরিচালনা করা হতো ভ্যাকুয়াম টিউব এর মাধ্যমে। এতে অসংখ্য ডায়োড, ট্রায়োড ও ভালভ ব্যবহারের কারণে এর আকৃতি ছিল বিশাল। এই কম্পিউটারের গতি কম হলেও এতে বিদ্যুত লাগতো অনেক বেশি এবং এতে প্রচুর তাপ উৎপাদন হতো যার ফলে এর মেইনটেইন খরচ অনেক বেশি। এতে মেমরি হিসাবে ব্যবহার করা হতো ম্যাগনেটিক ড্রাম।

প্রথম বাণিজ্যিক কম্পিউটার UNIVAC 1

UNIVAC 1 এর পর মূলত কম্পিউটারের প্রজন্মসমূহ শুরু হয়। এটি ছিল কম্পিউটারের প্রথম প্রজন্ম এবং এর পর থেকে ৫ম প্রজন্ম পর্যন্ত রয়েছে। এটিই ছিল অ্যাবাকাস থেকে শুরু করে ১ম বাণিজ্যিক কম্পিউটারের ইতিহাস।

Facebook Comments